
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। আর শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৭৭ জন। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার ডেঙ্গুতে ৪ জনের মৃত্য এবং আক্রান্ত হয়ে হয়েছিলেন এক হাজার ২৯ জন। এই নিয়ে চলতি মাসের ২৫ দিনে ডেঙ্গুতে মোট ১০৬ জনের মৃত্যু এবং ২৩ হাজার ৭৬৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া সব মিলিয়ে এ বছরে ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ২৬৯ জনে এবং মোট আক্রান্ত হলো ৫৪ হাজার ৭০২ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে, ঢাকা শহরের বাইরে ৬৪ জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩১ হাজার ৫৮৬ জন। এর মধ্যে উপকূলের ১০ জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ৬৭৬ জন। পাশাপাশি ডেঙ্গুতে তুলনামূলকভাবে মৃত্যুও এসব জেলায় বেশি। ঢাকা বাইরে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৮৪ জন। এর মধ্যে উপকূলের এসব জেলাগুলোতে মারা গেছেন ৭২ জন। অর্থাৎ ঢাকা শহরের বাইরের ৮৬ শতাংশ মৃত্যু হয়েছে এ কয়টি জেলায়। তবে উপকূলের জেলাগুলোতে সংক্রমণ ও মৃত্যু তুলনামূলক বেশি হওয়ার কারণ জানা যাচ্ছে না।
জনস্বাস্থ্য ও কীটত্ত্ববিদের বলছেন, ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেশি হওয়ার কারণ এসব জেলায় ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা দুর্বল। মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মকাণ্ড এখনো ঢাকা শহরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ডেঙ্গু মোকাবিলা নিয়ে সভা-সেমিনার-আলোচনাও ঢাকা শহরকেন্দ্রিক। অথচ মোট আক্রান্তের প্রায় ৬০ শতাংশ ঢাকা শহরের বাইরে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, উপকূলের ১০টি জেলায় মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে কক্সবাজার জেলায়, এই জেলায় এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৪০৩০ জন মৃত্যু ৫ জনের। বরগুনায় আক্রান্ত ১৩০৩, মৃত্যু ২ জনের। বরিশালে আক্রান্ত ১৩৬৬ ও মৃত্যু ২৫ জনের, ভোলায় আক্রান্ত ৪৮২ ও মৃত্যু ১ জনের, চাঁদপুরে আক্রান্ত ৮১৫ জন, মৃত্যু শুন্য। চট্টগ্রামে আক্রান্ত ২৬৪৮ জন, মৃত্যু ২১ জনের, যশোর ৭০৯ ও মৃত্যু ৩ জনের, খুলনায় ১৮৬৬ জন ও মৃত্যু ১১ জন। পিরোজপুর ৫৯৯ জন, মৃত্যু ২ জনের, পটুয়াখালী ৮৫৮ জন ও মৃত্যু ২ জনের।
বিশ্লেষণে আরও দেখা গেছে, ডেঙ্গুতে ১৬ থেকে ৪০ বছর বয়সী মানুষ ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ও মারা যাচ্ছেন। ডেঙ্গুতে পুরুষ আক্রান্ত বেশি হলেও মৃত্যু বেশি নারীর। আক্রান্ত মানুষের ৫৯ শতাংশ ঢাকা শহরের বাইরের। তবে মৃত্যুর ৭০ শতাংশ হচ্ছে ঢাকায়। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩ হাজার ৮৩৩ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ৮৬০ জন; আর ১ হাজার ৯৭৩ জন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, নতুন ভর্তি রোগীদের নিয়ে দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তির ডেঙ্গু আক্রান্তদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪ হাজার ২২৫ জনে, যা এক বছরে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যার দিক থেকে চতুর্থ সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২৩ সালে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন, ২০১৯ সালে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন এবং ২০২২ সালে ৬২ হাজার ৩৮২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল।
এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১ হাজার ৫৫ জন, যাদের মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয় ৩৩৯ জন, যাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। মার্চ মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩১১ জন; যাদের মধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এপ্রিল মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫০৪ জন, যাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে দুইজনের। মে মাসে ৬৪৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। জুন মাসে ৭৯৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে ৮ জন, জুলাই মাসে ২৬৬৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়, তাদের মধ্যে মৃত্যু হয় ১২ জনের, আগস্টে মোট আক্রান্ত হয়েছিলেন ৬ হাজার ৫২১ জন এবং মোট মৃত্যু হয়েছিল ২৭ জনের এবং সেপ্টেম্বর মাসে মোট আক্রান্ত হয়েছিলেন ২০ হাজার ২৫৮ জন এবং মোট মৃত্যু হয়েছিল ৯১ জনের।